মিষ্টি হাসি
মিষ্টি হাস্যোজ্জ্বল এক তরুনীর নাম । সারাদিন খিলখিল করেই হেসেই চলেছে । বিরাম নেই সেই হাসির । মিষ্টিকে যারা জানে না তারা হয়তো তাকে আধপাগলা মেয়ে ভেবে বসে । মিষ্টির এই হাসির জন্য অন্যসবাইকে নানারকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে । কিন্তু মিষ্টিকে যারা খুব কাছ থেকে চেনে তারা জানে এই নির্মল হাসির রহস্য । মিষ্টির মায়ের চিন্তা এই মেয়ের বিয়ে দেব কেমন করে ?
ছেলেপক্ষ দেখতে আসলেই মেয়ে যে খিলখিল করে হেসে ওঠে । ছেলেপক্ষ চোখ সরু করে বিরক্ত হয়ে চলে যায় । কিন্তু মিষ্টির কি দোষ সে যে হাসি আটকে রাখতে পারে না । ছেলেপক্ষ চলে গেলে মিষ্টি মাকে জড়িয়ে বলে , -মা তুমি তো জানো আমি কি জন্য হাসি তারপরও তুমি আমার ওপর রাগ করে থাকো ।
মা মেয়ের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে , - এই যুগে কোথায় পাবি সত্যবাদী যুধিষ্ঠীরকে । মিষ্টি বলে , -পাবো মা , তার অপেক্ষাতেই তো আছি । স্বাভাবিক নিয়মে অনেক ছেলের কাছ থেকেই প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে মিষ্টি । সেই প্রস্তাবে মিষ্টির সাড়া দেয়া তো দূরে থাক হেসেই সে উড়িয়ে দিয়েছে । হঠাৎ ঘটলো এক আচানক ঘটনা । টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাথে হালকা বাতাস । কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে মিষ্টি । পথের মাঝে কোথা থেকে যেন মোটা কাচের ফ্রেমের চশমা পড়া একটা ছেলে মিষ্টির সামনে এসে দাঁড়ায় । মিষ্টি একে চেনে ।
তাদের প্রতিবেশী । মিষ্টি বলে , -কী ব্যাপার অর্ক ভাই কিছু বলবেন ? অর্ক তোতলাতে তোতলাতে বলে , - না মানে তোমার সাথে একটা কথা ছিল । মিষ্টি বুঝে ফেলে ছেলেরা যখন এই ধরনের কথা বলে তখন তাদের কী কথা থাকতে পারে । মিষ্টি বলে-- কী কথা ? অর্ক বলে-- এমন দিনে তারে বলা যায় এমনো ঘোর বরষায় এই গানটা শুনেছো ? মিষ্টি বলে-- হু শুনেছি তো কি হয়েছে ? অর্ক বলে-- আমি স্কলারশিপ পেয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি ।
যাবার আগে তোমাকে কথাটা বলে যেতে চাই । তুমি হাসবে না তো । . মিষ্টি হাসির জন্য তৈরি ছিল । অর্ক বলে-- আমি তোমাকে .... তোমাকে .... অর্ক কথার মাঝে হুট করে চশমাটা খুলে ফেলে । এই প্রথম মিষ্টি অর্ককে চশমা ছাড়া দেখলো । ছেলেটার চোখ এতটা সুন্দর যা কিনা সবসময় মোটা কাচের ফ্রেমে ঢাকা থাকতো । এই চোখজোড়ায় কি যেন আছে মায়ার মতো । অর্ক বলে-- আজকে না বলতে না পারলে আর কোনদিনই বলতে পারবো না । তারপর দ্রুতগতিতে বলে ফেলে আমি তোমাকে ভালোবাসি । অর্ক কান পেতে রইলো এই বুঝি মিষ্টি খিলখিল করে হেসে উঠবে । কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে গেল । কই হাসির শব্দ তো শোনা যায় না । নাহ মিষ্টি হাসছে না ।
কি করে হাসবে মিষ্টি , অর্ক তো আর মিথ্যা বলছে না । মিষ্টি ছোটবেলা থেকে একটা ব্যাপার খেয়াল করে এসেছে কেউ মিথ্যা কথা বললে তার স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাসি পেয়ে যায় । চারদিকের মানুষেরা নিজেদরেকে মিথ্যার জালে আবদ্ধ করে রেখেছে , সেই মিথ্যার জাল ভেদ করে ফেলে মিষ্টির হাসি । সোজা কথায় মিষ্টির হাসির সাথে মিথ্যার একটা সম্পর্ক আছে । যাকে বলা চলে মিষ্টির এক ধরনের ম্যাজিক্যাল পাওয়ার রয়েছে । কিন্তু মিষ্টির এই ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আজ কাজ করছে না অর্কের সত্যের সামনে । অর্থাৎ সত্যিকার ভালবাসার সামনে । মিষ্টি অবাক হয় এই ভেবে যার অপেক্ষায় এতদিন ছিলাম সে কি না থাকে পাশের বাড়িতে । একেই বলে বুঝি ... ধুর মিষ্টির প্রবাদটা মনে পড়ছে না ।
অর্ক বলে-- তুমি হাসছো না কেন ? মিষ্টি বলে-- আপনি কি কোন হাসির কথা বলেছেন ? কিছুক্ষণ নীরবতা । অর্ক চশমাটা পরতে নেয় , মিষ্টি মানা করে চশমাটা পরতে । অর্ক বলে-- চশমাটা না পরলে বাড়ি ফিরবো কি করে ? মিষ্টি বলে-- আমার হাতটা ধরুন । আমি পৌঁছে দেব আপনাকে । অর্ক ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকায় মিষ্টির দিকে । সেই দৃষ্টিতে আরো যা আছে তার নাম বিষ্ময় । অর্ক কাঁপা কাঁপা ভাবে হাতটা বাড়ায় । মিষ্টি এগিয়ে এসে অর্কর হাতটা ধরে । আর টিপটিপ বৃষ্টি জোরে নামতে শুরু করে । মিষ্টি বলে -- এই যে হাতটা ধরলাম আর কিন্তু ছাড়ছি না । অর্কর মুখে মিষ্টি একটা হাসি ফুটে ওঠে ।
0 মন্তব্যসমূহ